Thursday, 5 May 2022

সালথায় বিয়ের তিন মাসের মাথায় সংঘর্ষে প্রাণ গেল যুবকের, অর্ধশতাধিক বাড়ি ভাঙচুর, আহত ৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফরিদপুরের সালথায় বিয়ের তিন মাসের মাথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে সিরাজুল ইসলাম (২৭) নামে এক যুবক। 

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ভাঙচুর করা হয়েছে অর্ধশতাধিক বসত বাড়িঘর। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শর্টগানের ফাঁকা গুলি ও কাঁদােনে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।

বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার খারদিয়া গ্রামে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। নিহত সিরাজ খারদিয়া ঠাকুর পাড়া গ্রামের মো. ইশারত মোল্যার ছেলে। তিনি পাশের সোনাপুর বাজারের রমজান মোল্যার স.মিলের শ্রমিকের কাজ করতেন। সিরাজুল মাস তিনেক আগে পাশের ফুলবাড়িয়া গ্রামের জাফর মাতুব্বরের মেয়ে খাদিজা আক্তারকে বিয়ে করে জীবন শুরু করেন বলে জানা গেছে। গ্রাম্য দলের কর্মী হওয়ায় আজ তার নতুন জীবনের ইতি টানতে হলো। তার মৃত্যুতে পরিবারের মাঝে চলছে শোকের মাতম।

সংঘর্ষের খবর পেয়ে সরেজমিনে খারদিয়া গ্রামে গিয়ে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়- আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত এক মাসে খারদিয়া গ্রামের প্রভাবশালী বাসিন্দা যদুনন্দী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক মোল্যার সমর্থকদের সাথে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আলমগীর মিয়ার সমর্থকদের একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরে চরম উত্তেজনা চলছিল।

চলমান উত্তেজনা মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে রফিক মোল্যার সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ঠাকুর পাড়ায় বসবাসরত আলমগীরের সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়ে সিরাজুল ইসলাম, মারুফ মীর ও শহিদ মোল্যাকে কাতরা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এরমধ্যে সিরাজুল ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার বুকে কোপ ছিল। বাকি দু’জনকেও আশস্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। পরে উভয় গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে সংঘর্ষে ঝাপিয়ে পড়ে।

একপর্যায় সিরাজ হত্যার বিষয় জানাজানি হলে রফিকের সমর্থকরা পিছু হটলে তাদের অন্তত ৩০-৩৫টি বসত বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় আলমীগের সমর্থকরা। এর আগে আলমগীরের সমর্থকদেরও বেশ কয়েকটি বসত বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। লুটপাট করা হয় ঘরে থাকা আসবাবপত্র। এতে হারুন শিকদার, শাহিন শিকদার, আব্দুল রব কাজী, নজরুল কাজী, জুয়েল কাজী, খোকন কাজী, রোকন কাজী, শহিদ খন্দকার, ওয়াহিদ কাজী, বকুল মোল্যা ও মিরান মোল্যার বাড়িসহ উভয় গ্রুপের মোট অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়। আহতদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বোয়ালমালী ও মুকসুদপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভর্তি করা হয়েছে।  

সংঘর্ষে সিরাজুল নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুর সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন- খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া চেষ্টা করে। তাতে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে না আসায় বেশ কয়েক রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ও ক্যাদানে গ্যাস ছুড়া হয়। নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ভাঙচুরের বিষয় তিনি বলেন- সংঘর্ষটি শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি না হওয়ায় নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যা হয়েছিল। কারণ একটি গ্রুপ হঠাৎ এসে অপর গ্রুপের বাড়িঘর ভাঙচুর-লুটপাট শুরু করে, পুলিশ আসলেই ভাঙচুরকারীরা পালিয়ে যায়। এভাবে পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে তারা খন্ড খন্ড হয়ে বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। ভাঙচুর চলাকালে ফ্রিজসহ আসবাবপত্র লুটের সময় একজনকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত- গত ১০ এপ্রিল খারদিয়া গ্রামের ভ্যানচালক আমিনুল মিয়া হত্যার গুজব রটিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান রফিক মোল্যার সমর্থকরা আ.লীগ নেতা আলমগীর মিয়ার সমর্থকদের অন্তত ১০টি বাড়ি ভাঙচুর করে। এরই জেরধরে ২১ এপ্রিল সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে আতঙ্কে মেহেরুন বেগম নামে এক নারী স্ট্রোক করে মারা যান। ওই সংঘর্ষে সময় উভয় গ্রুপের ১৯ বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এতে আহত হয় ১০ জন। এ ঘটনায় পুলিশ রফিক ও আলমগীরকে গ্রেফতার করে পুলিশের উপর হামলা মামলায় আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠান। গত ২৮ এপ্রিল তারা উভয়ই আদালত থেকে জামিনে পেয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। এরপরে ফের আবারও সংঘর্ষ হলো।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: