ফরিদপুর প্রতিনিধি: সালথায় সংঘর্ষে প্রাণ হারানো যুবকের লাশ দাফন সম্পন্ন, বাড়িতে চলছে শোকের মাতম ৩০টি রোজাই ছিল: নিয়মিত পড়ত নামাজ, অথচ নিহত হল সংঘর্ষে গিয়ে।
ফরিদপুরের সালথায় বিয়ের তিন মাস পার হবার পরই সংঘর্ষে নিহত হওয়া যুবক সিরাজুল ইসলামের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামে নিহতের বাড়ির পাশে একটি মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
লাশ দাফনের পর তার কবর জিয়ারত করেন স্থানীয় সাংসদ জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে কৃষি গবেষক শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী। জিয়ারত শেষে তিনি নিহতের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে শান্তনা দেন। তার সাথে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বরসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে খারদিয়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত হন সিরাজুল ইসলাম। নিহত সিরাজ খারদিয়া ঠাকুর পাড়া গ্রামের মো. ইশারত মোল্যার ছেলে। তিনি স্থানীয় সোনাপুর বাজারে থাকা রমজান মোল্যার স.মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন বলে জানা গেছে।
নিহতের প্রতিবেশীরা জানান- সিরাজুল নম্র-ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিল এলাকায়। ব্যক্তিগতভাবে কারো সাথে কখনো ঝামেলাও করেননি তিনি। রমজান মাসে ৩০টি রোজাই রেখেছেন। নামাজও পড়তেন নিয়মিত। মাস তিনেক আগে পাশ্ববর্তী ফুলবাড়িয়া গ্রামের জাফর মাতুব্বরের মেয়ে খাদিজা আক্তারকে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করেন সিরাজুল। বিয়ের পর হাঁসি-খুশিতে ভালই চলছিল তাদের নব-দাম্পত্য জীবন। গ্রাম্য দলের কর্মী হয়ে সংঘর্ষে যোগ দিতে গিয়ে আজ নিভে গেল তাদের সেই সুখের সংসারের পাতি। নতুন জীবনের টানতে হলো ইতি। তার মৃত্যুতে পরিবারের মাঝে চলছে শোকের মাতম।
স্থানীয়রা জানান- আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত এক মাসে খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা যদুনন্দী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক মোল্যার সমর্থকদের সাথে ওই ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারন সম্পাদক আলমগীর মিয়ার সমর্থকদের একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরে চরম উত্তেজনা চলছিল।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে রফিক মোল্যার সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ঠাকুর পাড়ায় বসবাসরত আলমগীরের সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়ে সিরাজুল ইসলাম, মারুফ মীর ও শহিদ মোল্যাকে কাতরা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এর মধ্যে সিরাজুল ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার বুকে কোপ ছিল। বাকি দু’জনকেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। পরে উভয় গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে সংঘর্ষে ঝাপিয়ে পড়ে।
একপর্যায় সিরাজ হত্যার বিষয় জানাজানি হলে রফিকের সমর্থকরা পিছু হটলে তাদের অন্তত ৩০-৩৫টি বসত বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় আলমীগের সমর্থকরা। এর ড়আগে আলমগীরের সমর্থকদেরও বেশ কয়েকটি বসত বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। লুটপাট করা হয় ঘরে থাকা আসবাবপত্র। এতে হারুন শিকদার, শাহিন শিকদার, আব্দুল রব কাজী, নজরুল কাজী, জুয়েল কাজী, খোকন কাজী, রোকন কাজী, শহিদ খন্দকার, ওয়াহিদ কাজী, বকুল মোল্যা ও মিরান মোল্যার বাড়িসহ উভয় গ্রুপের মোট অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়। আহতদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বোয়ালমালী ও মুকসেদপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভর্তি করা হয়েছে।
ফরিদপুর সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন- খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া চেষ্টা করে। তাতে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে না আসায় বেশ কয়েক রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ও ক্যাদানে গ্যাস ছুড়া হয়। নিহতের লাশ ময়না তদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ভাঙচুরের বিষয় তিনি বলেন- সংঘর্ষটি শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি না হওয়ায় নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যা হয়েছিল। কারণ একটি গ্রুপ হঠাৎ এসে অপর গ্রুপের বাড়িঘর ভাঙচুর-লুটপাট শুরু করে, পুলিশ আসলেই ভাঙচুরকারীরা পালিয়ে যায়। এভাবে পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে তারা খন্ডখন্ড হয়ে বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। ভাঙচুর চলাকালে ফ্রিজসহ আসবাবপত্র লুটের সময় একজনকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
0 coment rios: